কর্মীর শত মিনিটের কাজে নেতার এক মিনিট!

আমিনুল ইসলাম

বছর দেড়েক আগে ছিল সরকারবিরোধী আন্দোলন, কিন্তু দলীয় চেয়ারপারসন কারাবন্দি হওয়ার পর তা এখন নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আন্দোলন নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ভূমিকা হতাশাজনক। হুঙ্কারের এই আন্দোলন কবে হবে সহসাই বলা যাচ্ছে না। বলে বলে আন্দোলন না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছেন তৃণমূলের ত্যাগীরা।

কর্মীদের চাঙা ও মানুষের আস্থা অর্জনের লক্ষ্য বিএনপির অনেক দিনের। সেই চেষ্টায় কর্মসূচির এই যাত্রায় ব্যর্থ হতে চাই না বিএনপি।

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কর্মসূচি দিয়ে কর্মীদের চাঙা এবং আস্হায় আনতে চাই নেতারা। খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই লেখার ২লাখ পোস্টার  সারাদেশে  লাগাচ্ছে বিএনপি্। সেই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গত ৫ই সেপ্টেম্বর বুধবার রাত  ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এসব পোস্টার  নিজ হাতে লাগিয়েছেন। সেই থেকে সর্বশেষ তিনি রোববার ১৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২টায় রাজধানীর পুরান ঢাকা এলাকায় পোস্টার লাগান। পোস্টার গুলিতে দেখা যাচ্ছে খোলা জানালা দিয়ে আলো পড়ছে বেগম জিয়ার মুখে, আর পাশে লেখা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই।

খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে উত্তরায় দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগাচ্ছেন রুহুল কবির রিজভী।

গত ৯ই সেপ্টেম্বর বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী  কেরানীগঞ্জের  বিভিন্ন স্থানে নিজ হাতে তাদের প্রিয় নেত্রীর পোস্টার লাগিয়েছেন ।সেই সময় বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘আসুন, সবাই যার যার জায়গা থেকে নিজ বাড়ি,আঙ্গিনা থেকে পোস্টার লাগানো শুরু করি। আমাদের এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা হয়তো মহীরুহ আকার ধারণ করবে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পোস্টার লাগানের ছবি গুলি বিএনপির নেতা কর্মীরা ভালই ভাইরাল করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । তা দেখে দলের তৃণমূলের নেতা নেতাকর্মী উদ্বুদ্ধ হয়।

খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে কেরানীগঞ্জে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগাচ্ছেন অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী

বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানের দল হিসেবে জনপ্রিয়তার দিক থেকে যে অবস্হানে রয়েছে তাতে বিএনপির স্হায়ী সদস্য, নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলার  নেতা নেত্রীদের যদি ক্ষমতার লোভের চেয়ে ত্যাগের মানষিকতা থাকত তাহলে  কর্মীদের চাঙা ও মানুষের আস্থা অর্জনের লক্ষ্য পৌঁছতে হাতে গুনা বেশিদিন লাগত না দলটির ।

নেতারাই পরিবর্তনের রূপকার, সেখানেই বিএনপির ঘাটতি । জাতির আস্থা অর্জন, উত্থান  পতন অনেকাংশে নির্ভর করে নেতৃত্বের ওপর। নেতৃত্ব হচ্ছে নিজেকে জানা, দক্ষ যোগাযোগ, পারস্পরিক আস্থা ও প্রয়োজনীয় কাজের মাধ্যমে সহযোগীদের কাছে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা এবং পরিস্থিতি জয় করার সামর্থ্য। তিনিই নেতা যিনি জানেন আনুসরণ করেণ ও দেখান নেতা ঘুমালে দল ঘুমায় নেতা নিথর-নিস্তব্ধ হলে দল নিথর নিস্তব্ধ । নেতা দেখেও না দেখার ভান করলে দল অন্ধত্ব ধারণ করে। নেতা ভালো মন্দ পার্থক্য করার শক্তি হারালে দলে বধিরের সংখ্যা বেড়ে যায়। নেতা আত্মকেন্দ্রিক হলে জনসাধারণও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে নিমগ্ন হয়।

এবারে বিএনপির নেতা রিজভী, নিপুণ রায়-রা রাত ৩টা পর্যন্ত দলের কর্মসূচি পালনে দেখে উদ্বোদ্ধ বিএনপির হাজার হাজার নেতা কর্মী। তেমনি কক্সবাজারের দুজন কর্মী দোলন ধর ও আহম্মদ হোসেন গুরা মিয়া।তারা দুইজনে দলের জন্য নির্যাতিত, তাদের জেলে যেতে হয়েছে একাধিকবার । তারপরও দল ছাড়েনি ,ছাড়েনি জিয়ার আর্দশ বাস্তবায়নের আন্দোলন। সহ-সহ সংগঠনের জন্য তার রাজপথের আপোষহীন সৈনিক  বলে পরিচিত।কক্সবাজার জেলায় কোন সিনিয়র নেতাদের পোস্টার লাগাতে দেখা না গেলেও গত ১৭ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে জেলা যুবদলের যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক দোলন ধর ও শহর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ হোসেন গুরা মিয়া ব্যস্ত ছিল পোষ্টার লাগানোতে । তাদের মতে ‘আমরা জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গনতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ গড়তে চাই।আজকে আমাদের নেতা নেত্রীরা আদর্শ চুত্য হয়ে ক্ষমতার রাজনীতি করতে গিয়ে দলের এই অবস্থা, আমাদের নেত্রী কারাবন্দি ‘‘।

সময় বলে দিবে, বিএনপির যোগ্য নেতার কর্মের মধ্য দিয়েই কর্মীরা কখন খুঁজে নিবে তাদের কাজ, দায়িত্ব ও কর্তব্য। কখন নেতার এক পা অগ্রসর হবে আর তাদের কর্মী বাহিনীরা দুই পা অগ্রসর হয়। নেতার দলের আদর্শ বাস্থবায়নে অন্তর দিয়ে এক মিনিটের কাজ কবে তা পরিনত হবে কর্মী বাহিনীর শত মিনিটের কাজে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে কক্সবাজারে পোস্টার লাগাচ্ছেন দোলন ধর ও আহম্মদ হোসেন গুরা মিয়া